স্বাধীন সংবাদ প্রতিবেদক:
খুলনা মহানগরীর ওপেন মার্কেট সেল (OMS) বিতরণ ব্যবস্থায় নতুন করে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এবার অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন খাদ্য পরিদর্শক মোঃ আবুবকর সিদ্দিক। স্থানীয় সূত্রে তাকে ‘কালেকশন মাস্টার’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। জানা যায়, তিনি OMS ডিলারদের কাছ থেকে নিয়মিত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে রয়েছে। অভিযোগ আরও রয়েছে, তিনি অন্য পরিদর্শকদের নির্দেশনা দিয়ে অনিয়মকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, ফলে সাধারণ মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে চাল ও আটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, আবুবকর সিদ্দিক নিয়মিত ‘কালেকশন’ গ্রহণ করে, যা মূলত মাসিক ভিত্তিতে সংগঠিত। তার নির্দেশনা অনুযায়ী অন্যান্য পরিদর্শকও এই ঘুষ ও কমিশনের অংশ পেয়ে থাকেন। ফলে, দোষী ডিলাররা কোনও ধরনের তদারকি ছাড়াই ব্যবসা চালাতে পারছেন। এমন পরিস্থিতিতে খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সিস্টেমিক দুর্নীতির চিত্র আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
অন্যদিকে, কাজী নাহিদ হাসানের দ্রুত প্রমোশন নিয়েও স্থানীয় পর্যায়ে প্রশ্ন উঠেছে। নাহিদ ২০২৪ সালের জানুয়ারি ও মার্চ মাসে উপ-খাদ্য পরিদর্শক (জুনিয়র ইনস্পেকটর) হিসেবে খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে তালিকাভুক্ত ছিলেন। কিন্তু চলতি বছরে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে খাদ্য পরিদর্শক (সিনিয়র ইনস্পেকটর) পদে উন্নীত হয়েছেন। এই প্রমোশনকে অনেকেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সাথে সাংঘর্ষিক মনে করছেন। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, এর পেছনে প্রভাবশালী কোনও হাত বা ঘুষের সম্পর্ক থাকতে পারে।
খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তানভীর হোসেনের নেতৃত্বে বিভাগে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। বিশেষ করে আটা সরবরাহকারী মিলারদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি খাদ্য পরিদর্শকদের অপহরণের মতো ঘটনা ঘটেছে, যা বিভাগের নিরাপত্তা ও সততার প্রশ্ন তোলে।
স্থানীয়রা মনে করছেন, এই অনিয়মের কারণে সাধারণ মানুষ সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা দাবী করেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত শুরু করতে হবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি এই ধরনের দুর্নীতি চলতে থাকে, তাহলে খাদ্য নিরাপত্তা বিপন্ন হবে এবং সরকারি কর্মসূচির লক্ষ্য ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এখনও এই অভিযোগে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা চাইছেন স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। তারা আশাবাদী, সঠিক তদন্ত হলে ভুল-অনিয়ম প্রকাশ পাবে এবং সাধারণ মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য সামগ্রী পাবে।
এদিকে, সমাজকর্মী ও নাগরিক সচেতনতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। তারা সতর্ক করেছেন, অনিয়ম চলতে থাকলে তা শুধু খুলনা নয়, সমগ্র দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
খুলনা মহানগরীর ওপেন মার্কেট সেল বিতরণ ব্যবস্থায় এই ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। তবে সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য এবং স্থানীয় সূত্রের দাবী অনুযায়ী, ঘুষ ও কমিশন বাণিজ্য এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা সরাসরি জনগণের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করছে। তাই স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের তৎপরতা এবং অবিলম্বে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।