‘গ্রীণ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে সুস্থ শিশুর ভয়াবহ রোগের ধাক্কা

সাইমুন ইসলাম সাইফুল্লাহ:

পাঁচ বছরের শিশু সন্তান তানিম ইসলামকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান মহিপুর থানা এলাকার বাসিন্দা নুর আলম। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি মহিপুর থানা সদরে অবস্থিত ‘গ্রীণ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ সিবিসি (CBC) পরীক্ষা করান। প্রায় এক ঘণ্টা পর সিবিসির একটি ভুল রিপোর্ট প্রদান করা হয়, যেখানে রোগীর নামেও ভুল ছিল।

ভুক্তভোগী নুর আলম বলেন, “গতকাল আমার অসুস্থ ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে গেলে তিনি সিবিসি টেস্ট দেন। আমি গ্রীণ লাইফে গিয়ে ৫০০ টাকা দিয়ে রিপোর্ট করাই, কিন্তু তারা একেবারে ভুল রিপোর্ট দেয়। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।”

পরে অন্য একটি ডায়াগনস্টিকে টেস্ট করালে রিপোর্ট স্বাভাবিক আসে। এরপর নুর আলম তার এক আত্মীয় আল-মামুনকে নিয়ে গ্রীণ লাইফ ডায়াগনস্টিকে গেলে রিসিপশনিস্ট মোহাম্মদ রানা তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন এবং একপর্যায়ে আল-মামুনকে মারধরের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তারা আগের রিপোর্ট রেখে আরেকটি ভিন্ন রিপোর্ট দেন। কর্তৃপক্ষ দাবি করে, রোগীর স্বজনের তাড়াহুড়ার কারণে এই ভুল হয়েছে।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশে অবস্থিত গ্রীণ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের সঙ্গে এমন আচরণ প্রায় নিয়মিত। মনগড়া রিপোর্ট দিয়ে রোগীদের আতঙ্কিত করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, “গত তিন মাস ধরে কোনো টেকনোলজিস্ট না থাকা সত্ত্বেও রিসিপশনিস্ট রানা নিজেই রিপোর্ট তৈরি করেন, এমনকি এক্সরে করান।”

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর আত্মীয় আল-মামুন বলেন, “রিপোর্টে শুধু ভুল তথ্যই নয়, রোগীর নামও ভুল ছিল। অভিযোগ জানাতে গেলে রানা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।”

রিসিপশনিস্ট মোহাম্মদ রানা এ বিষয়ে বলেন, “রোগীর তাড়াহুড়ায় এমনটা হয়েছে। দয়া করে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করছি।”

গ্রীণ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মো. সবুজ আল মামুন বলেন, “আমি তো ডাক্তার না, তবে যতদূর জানি সিবিসির ডব্লিউবিসি কাউন্ট জিরো আসার কথা না।”
রিপোর্ট প্রস্তুতিতে রিসিপশনিস্টকে ব্যবহার করা নিয়ে তিনি বলেন, “যখন টেকনোলজিস্ট ছিল না, তখন তুলাতুলির একটা ল্যাবে রিপোর্ট করানো হতো।”

এ বিষয়ে একাধিক এমবিবিএস ডাক্তার জানান, “সিবিসি রিপোর্টে ডব্লিউবিসি কাউন্ট জিরো আসা অসম্ভব। এটি একটি ভুল রিপোর্ট এবং এটি ভয়াবহ রকমের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।”

কলাপাড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রসাদ অধিকারী বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। ভুল রিপোর্ট দিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, “বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চলতে দেওয়া যাবে না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *