মোঃ জাহাঙ্গীর আলম:
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের বড় জোঁকা আবাসনে বহিরাগত এক ব্যক্তিকে সরকারি ঘরে বসবাসের সুযোগ দেওয়ায় তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে।
জানা যায়, ১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে ঘিওর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ শহিদুল ইসলাম এবং ইউনিয়নের নায়েব মোঃ লুৎফর রহমান যৌথভাবে একটি তালাবদ্ধ ঘর খুলে আলামিন নামে একজন ব্যক্তিকে কক্ষ বুঝিয়ে দেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আলামিন এই এলাকার বাসিন্দা নন এবং প্রকৃত ভূমিহীনদের হক হরণ করে তাকে ঘর দেওয়া হয়েছে।
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমাদের অনেক পরিবার বছরের পর বছর মানবেতরভাবে বসবাস করছে। অথচ একজন অচেনা ব্যক্তি এখানে উঠে পড়লেন।”
জানা গেছে, আলামিন নামে ওই ব্যক্তি ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বামীর ব্যারিস্টারের প্রাইভেট কার চালক। তাকে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে আলামিন নিজেই জানান, “আমি ইউএনও স্যারের কাছে আমার সমস্যার কথা বলেছিলাম। উনি দয়া করে আমাকে থাকতে দিয়েছেন।”
তথ্য মতে, পূর্বে এই ঘরে বসবাস করতেন বিশ্বনাথ নাথ নামে একজন ব্যক্তি, যিনি এক বছর আগে ‘চরিত্রগত সমস্যার’ কারণে উচ্ছেদ করা হয়।
এছাড়া আরও অভিযোগ রয়েছে, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাদতপুর গ্রামের বাসিন্দা মিনাজ আলী নামে এক ব্যক্তি এই এলাকায় জামাই হয়ে নদীভাঙনের অজুহাতে ভোটার হয়ে সরকারি আবাসনে উঠেছেন।
এ বিষয়ে বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের নায়েব মোঃ লুৎফর রহমান জানান, “ইউএনও ম্যাডাম আমাকে ফোন করেছিলেন, আমি শুধু নির্দেশ পালন করেছি।”
সরজমিনে আবাসনে থাকা আলামিন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ শহিদুলকে ফোন রিসিভ করে ধরিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আলামিন বড়টিয়া গ্রামের বাসিন্দা। আপনি কই? আছেন? উপজেলা ভূমি অফিসে আসেন।”
অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ আওয়াল খান বলেন, “আমার ইউনিয়নের সচিব রাতের বেলায় আবাসনের চাবি নেয়। কাকে ঘরে তোলা হয়েছে, তা আমার জানা নেই।”
জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সবুজ কুমার সাহার কাছে জমা থাকা আবাসনের চাবি কয়েকদিন আগে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার শহিদুল ইসলাম নিয়ে যান।
এদিকে প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। বাষ্টিয়া গ্রামের মৃত সালাম সরকারের ছেলে সুমনের কোনো ভিটেবাড়ি নেই। তিনি বাঁশঝাড়ের পাশে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার মতো আরও অনেকেই সরকারি ঘরের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আছমা সুলতানা নাসরীন বলেন, “আলামিন নামে লোকটি ভূমিহীন, সে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা বরাবর আবেদন করে আসছে। তাছাড়া ঐ আবাসনের কক্ষটি ফাঁকা ছিলো। যদি ঐ ইউনিয়নের কোন ভূমিহীন থাকে, তাহলে উপজেলা বরাবর আবেদন করতে।”