স্বাধীন স্পোর্টস ডেস্ক:
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সিনিয়র খেলোয়াড় জাহানারা আলমের আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। রোববার থেকেই কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে। বিসিবি জানায়, যে কোনো ধরনের হেনস্তার বিরুদ্ধে বোর্ড কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং তদন্তে কোনো গাফিলতি করা হবে না।
তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তারিক উল হাকিম। সদস্য হিসেবে আছেন বিসিবির একমাত্র নারী পরিচালক রুবাবা দৌলা এবং সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার সারওয়াত সিরাজ শুক্লা, যিনি বাংলাদেশ উইমেন’স স্পোর্টস ফেডারেশনের সভাপতিও।
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। আমরা শুনেছি, ঘটনাটি বেশ আগের। তবে কমিটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তদন্ত করবে এবং রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, বিসিবিতে যোগদানের পর থেকেই নারী ক্রিকেট বিভাগকে তাঁর কাছে সবচেয়ে অবহেলিত মনে হয়েছে, তাই এখন বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জানান, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ভিডিওর পরিপ্রেক্ষিতেই তদন্ত শুরু করা হয়েছে। “ভিডিওটি আমাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। আমরা জানি, এ ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করবে, এবং আমরা তাদের ১৫ কর্মদিবস সময় দিয়েছি সঠিকভাবে তদন্ত সম্পন্ন করার জন্য।”
অন্যদিকে, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “এখন থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তদন্ত কমিটি পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করবে এবং তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে জাতীয় পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হবে। নারীদের জন্য সব ধরনের খেলা নিরাপদ হতে হবে এবং ক্রীড়াঙ্গনে শুদ্ধ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”
তবে শুধু কমিটি গঠনই যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির দাবি, অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে কমিটিতে দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অন্তত দুজন স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ যুক্ত করতে হবে। রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমরা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনকে ইতিবাচকভাবে দেখি। তবে যৌন হয়রানির মতো সংবেদনশীল বিষয়ে তদন্তের জন্য পেশাদার অভিজ্ঞতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, অতীতে নারী খেলোয়াড়দের ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলেও বিসিবি কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি; বরং অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে বিচারহীনতাকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এটি যেমন ক্রীড়াঙ্গনে পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছে, তেমনি নারী অংশগ্রহণের সম্ভাবনাকেও বাধাগ্রস্ত করছে।
তদন্ত কমিটি এখন প্রাথমিক সাক্ষাৎকার ও নথিপত্র যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে। ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে, রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই তারা প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। নারী ক্রিকেটে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে এটি হতে পারে বিসিবির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মুহূর্ত।