জেলা পর্যায়ে গ্রাম আদালত চালু হলে পক্ষপাতিত্ব কমবে: ডিসি রায়হান কবির

মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী:

নারায়ণগঞ্জে জেলা পর্যায়ে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রাম আদালত কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নই ছিল এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে কর্মশালাটি শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ রায়হান কবির। তিনি কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে গ্রাম আদালতের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সহকারী পুলিশ সুপার তারিক আল মেহেদী, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত ডিডিএলজি নাইমা ইসলাম, জেলা তথ্য কর্মকর্তা কামরুজ্জামান রোমান, সিনিয়র সহকারী কমিশনার টি. এম. রাহসিন কবির, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসিনা মমতাজ, সহকারী শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম এবং জেলা ব্যবস্থাপক ফিরোজা বেগম ঝুমুর।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ রায়হান কবির বলেন,
“জেলা পর্যায়ে গ্রাম আদালত সক্রিয় থাকলে বিচার ব্যবস্থায় পক্ষপাতিত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। সঠিক প্রক্রিয়ায় বিচার সম্পন্ন না হলে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ স্বাভাবিকভাবেই ওঠে। যার পক্ষে রায় যায় সে খুশি হয়, আর বিপরীত পক্ষ অসন্তুষ্ট থাকে। তবে গ্রাম আদালত সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হলে এই সমস্যাগুলো কমে যাবে।”

তিনি আরও বলেন,
“আমরা ছোটখাটো বিরোধ বা পারিবারিক–সম্পত্তিগত বিষয়েও থানায় ছুটে যাই। অথচ অনেক বিষয়ই গ্রাম আদালতে বিচারযোগ্য। অনেক সময় থানাও জানে না কোন ঘটনা গ্রাম আদালতের অধিক্ষেত্রভুক্ত। এ বিষয়ে জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে।”

ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ডিসি বলেন,
“গ্রাম আদালতের বিচারক হবেন ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি অনুপস্থিত থাকলে যোগ্য মেম্বার বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। গ্রাম আদালত সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত রায় দিতে পারে—এ বিষয়েও জনগণকে অবহিত করা জরুরি।”

কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন গ্রীন ফর পীচের চেয়ারম্যান আরিফ মিহির, প্রভাত সমাজ কল্যাণ সংসদের চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার দাসসহ বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা গ্রাম আদালতের কার্যকর বাস্তবায়নে সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা ও স্থানীয় পর্যায়ে সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।

দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা গ্রাম আদালতের কার্যক্রম, বিধি-বিধান, বিচারপ্রার্থীদের সুবিধা, মামলা ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত বিচার প্রাপ্তির সুযোগ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বিচারব্যবস্থাকে আরও সহজ ও জনবান্ধব করার উপায় নিয়ে মতবিনিময় করেন। সার্বিকভাবে, গ্রাম আদালতকে শক্তিশালী করতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন বক্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *