ডিক্লারেশন বাতিল হলেও আপিলের সুযোগ রাখছে জেলা প্রশাসন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:


‘একই প্রতিবেদন হুবহু’ভাবে প্রকাশসহ ছাপাখানা ও প্রকাশনা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ময়মনসিংহ জেলার ১১টি স্থানীয় পত্রিকার ঘোষণা (ডিক্লারেশন) বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) উম্মে হাবিবা মীরা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে বেশ কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পাতায় একেবারে একই সংবাদ, শিরোনাম ও ছবি হুবহু ছাপা হচ্ছিল। প্রাথমিকভাবে ১৩টি পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। পরে গঠিত তদন্ত কমিটি যাচাই-বাছাই করে ১১টির ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতা পায়। তদন্তে আরও জানা যায়, কয়েকটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশনা বন্ধ রেখেও সরকারি নথিতে নিয়মিত প্রকাশের তথ্য দাখিল করছিল। আবার কিছু পত্রিকা অনুমোদিত ছাপাখানার বাইরে মুদ্রণ করছিল, যা ‘ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন, ১৯৭৩’ এর বিধান পরিপন্থী।

বাতিল হওয়া পত্রিকার তালিকা:
১. দৈনিক আজকের ময়মনসিংহ, ২. দৈনিক দেশের খবর, ৩. দৈনিক বিশ্বের মুখপত্র, ৪. দৈনিক ঈষিকা, ৫. দৈনিক অদম্য বাংলা, ৬. দৈনিক আলোকিত ময়মনসিংহ, ৭. দৈনিক দিগন্ত বাংলা, ৮. দৈনিক জাহান, ৯. দৈনিক কিষাণের দেশ, ১০. দৈনিক হৃদয়ে বাংলাদেশ, ১১. সাপ্তাহিক পরিধি।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা মীরা বলেন,

“তদন্তে দেখা গেছে, কয়েকটি পত্রিকা একই প্রতিবেদন হুবহু প্রকাশ করেছে, যা সাংবাদিকতার মৌলিক নীতির পরিপন্থী। আমরা কারও প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট নই—আইন অনুযায়ী যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, কেবল তাদের ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, সংশ্লিষ্ট পত্রিকাগুলো চাইলে প্রশাসনের কাছে আপিলের মাধ্যমে পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবে।

এদিকে কিছু সম্পাদক জানিয়েছেন, তারা এখনও অফিসিয়াল চিঠি হাতে পাননি এবং বিষয়টি যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন। তারা বলেন, “আমরা এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি। আইন মেনে চলাই আমাদের লক্ষ্য। তবে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, সেটি সংশোধনের সুযোগ পাওয়া উচিত।”

স্থানীয় সাংবাদিক মহলে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ প্রশাসনের পদক্ষেপকে সাংবাদিকতার মান রক্ষার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে কেউ মনে করছেন, প্রথমে সতর্কবার্তা দিয়ে সংশোধনের সময়সীমা দেওয়া যেতে পারত।

জেলা তথ্য অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন,

“ডিক্লারেশন বাতিল মানে প্রকাশনা সম্পূর্ণ বন্ধ নয়। প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পত্রিকাগুলো প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন আইন অনুযায়ী আপিল করতে পারবে।”

বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলায় অনুমোদিত সংবাদপত্রের সংখ্যা ছিল ৪৩টি। এর মধ্যে ১১টি ডিক্লারেশন বাতিল হওয়ায় কার্যকর সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৩২-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *