নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ও সমালোচিত নানা কারণে রাইফেল ক্লাব এখন সিএনজি অটো ইজিবাইকের স্ট্যান্ড

প্রতিবেদক- ব্যুরো চিফ মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী।

গত ১৬ বছর আলোচনায় ও সমালোচনায় নানা কারনে ছিল নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব। অলিখিতভাবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের উত্তরাঞ্চলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ হতো এ ক্লাব থেকে। প্রভাবশালী নির্দিষ্ট কিছু মানুষের বাইরে ক্লাবের সদস্যরাও যেন এখানে প্রবেশ করতে বিব্রত হতেন, ভয় পেতেন। বিশালাকৃতির স্টিলের গেট আর নিরাপত্তা প্রহরীদের পেরিয়েই কেবল ঢোকা যেত এ ক্লাবে। সেই রাইফেল ক্লাবের আঙ্গিনা এখন সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শুধু আওয়ামী লীগ সরকারেরই পতন হয়নি, যেন সঙ্গে পতন হয়েছে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের প্রভাবশালী সদস্যদের। ক্ষুব্ধ মানুষের রোষের আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে রাইফেল ক্লাব। এরপর থেকেই ক্লাবটির ছন্নছাড়া অবস্থা। তবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড প্রশস্ত করতে রাইফেল ক্লাবটিকে বর্তমান জমি থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিগত সরকারের আমলেই নেওয়া হয়েছিল। তবে ক্লাবের সদস্যরা বলছেন, জনস্বার্থে ক্লাবটিকে বর্তমান অবস্থান থেকে সম্মানজনকভাবে সরিয়ে নেওয়া ছিল এক বিষয়। আর ৫ আগস্টে যেভাবে লুটপাটের মাধ্যমে রাইফেল ক্লাবটিকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে সেটি অসম্মানজনক। কারণ এই রাইফেল ক্লাবের খেলোয়াড়রা বিভিন্ন ইভেন্টে দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক পদক অর্জন করে নারায়ণগঞ্জের সুনাম অনন্য উচ্চতায় নিয়েছিল।

গতকাল ৬-১০-২৫ সোমবার} দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় রাইফেল ক্লাবে গিয়ে দেখা গেছে, ভেতরে সারি করে রাখা হয়েছে সিএনজি অটোরিকশা। পুড়ে যাওয়া ভবনটি যেন ভূতুড়ে ভবন। ভবনটির বাইরের দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুন। রাইফেল ক্লাবের অবস্থান ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রবেশমুখে।
এই ক্লাবের প্রভাবশালী সদস্যদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এ কে এম শামীম ওসমান। মূলত শামীম ওসমান ও তার অনুসারিরাই এই ক্লাব বেশি ব্যবহার করতেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের দক্ষিণাঞ্চলের নেতারা যারা এই ক্লাবের সদস্য তারা তেমন একটা এখানে আসতেন না।

রাইফেল ক্লাবের আঙ্গিনায় রাখা সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্লাবটি এখন ব্যবহৃত না হওয়ায় তারা রাস্তায় না রেখে এখানে তাদের গাড়ি রাখছেন। এজন্য কারো কাছ থেকে কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয়নি তাদের। তাছাড়া রাস্তার পাশে গাড়ি রাখলে যানজট সৃষ্টি হয়।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের উপব্যবস্থাপক ও নারায়ণগঞ্জ সড়ক উপবিভাগ-১-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ মজুমদার বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের কাজ শেষ। তবে চাঁদমারি থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত অংশে কিছু জটিলতার জন্য কাজ হয়নি। এর মধ্যে রাইফেল ক্লাবটিও রয়েছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্লাবটি ভাঙা হয়নি। নতুন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে টেন্ডার দিয়ে চাঁনমারি থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ করা হবে। তখন রাইফেল ক্লাব এবং পাশের জিয়া হলও ভাঙা পড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *