বরিশালের পোর্ট রোডে হকার-দোকানের জন্য দীর্ঘ জ্যাম: চলাচল ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত, স্থানীয়দের অভিযোগ

বরিশাল স্টাফ রিপোর্টার:

বরিশাল শহরের হৃদয়স্থলে অবস্থিত পোর্ট রোডের মাছবাজার লঞ্চঘাট থেকে পলাশপুর ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার লম্বা রাস্তায় রাস্তার পাশে অবৈধভাবে দোকানপাট ও হকারদের উপস্থিতির কারণে দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শহরের বাসিন্দাদের চলাচল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই এলাকায় যানজটের কারণে অফিস-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী ও ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন কষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এই রাস্তাটি বরিশালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ পথ, যা মাছবাজারের মাধ্যমে লঞ্চঘাটের সঙ্গে যুক্ত এবং পলাশপুর ব্রিজের মাধ্যমে শহরের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে রাস্তার দুই পাশে ফুটপাত জুড়ে ফল-সবজি, মাছ-মাংসের দোকান এবং হকারদের দোকান বসার কারণে যানবাহন চলাচলের পর্যাপ্ত জায়গা নেই। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত গড়ে ৩০-৪৫ মিনিটের জ্যাম দেখা যায়, যা সন্ধ্যায় আরও তীব্র হয়। ফলে জরুরি চিকিৎসা সেবা বা স্কুল-কলেজের শাটলগুলোও প্রভাবিত হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা এই সমস্যা নিয়ে বিরক্ত। মাছবাজার এলাকায় বসবাসকারী স্কুলশিক্ষক রহিমা বেগম বলেন, “প্রতিদিন সকালে বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছাতে অর্ধঘণ্টার বেশি সময় লাগে, যা আগে মাত্র ১০ মিনিটের কাজ ছিল। হকাররা রাস্তা দখল করে বসেছে, কিন্তু সিটি করপোরেশন বা পুলিশ কেউ দেখছে না। এতে আমাদের দৈনন্দিন জীবন কঠিন হয়ে উঠেছে।” অন্যদিকে, একজন অটোরিকশা চালক আব্দুল করিম জানান, “জ্যামের কারণে আমরা দিনে কয়েক ঘণ্টা অকারণে অপেক্ষা করি। এতে আয় কমে যায় এবং যাত্রীদেরও ক্ষতি হয়।”

বরিশাল সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, “এই সমস্যা আমরা জানি। হকারদের জন্য আলাদা বাজার স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে, তবে জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে। শীঘ্রই অভিযান চালিয়ে অবৈধ দোকানগুলো অপসারণ করা হবে।” তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন যে, অপসারণের আগে বিকল্প ব্যবস্থা না করলে তাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।

পরিবহন শাখার সরকারি পর্যবেক্ষক মনে করছেন, এই ধরনের জ্যাম শহরের সামগ্রিক ট্রাফিক ব্যবস্থাকেই প্রভাবিত করছে। তারা পরামর্শ দিয়েছেন যে ফুটপাত পুনরুদ্ধার এবং হকারদের জন্য নির্দিষ্ট জোন তৈরি করলে সমস্যা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। আজ স্থানীয় সাংবাদিকমহলে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যেখানে সকলেই একমত হয়েছেন যে অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।

বরিশালের এই ব্যস্ত রাস্তাটি শুধু বাণিজ্যের কেন্দ্র নয়, বরং শহরের জীবনরেখা। কর্তৃপক্ষের সচেতনতা ও দ্রুত পদক্ষেপের অপেক্ষায় স্থানীয়রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *