ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনায় আমি খুশি ছিলাম না: ডোনাল্ড ট্রাম্প

স্বাধীন আন্তর্জাতিক ডেস্ক: 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না। বুধবার (১৫ অক্টোবর) স্থানীয় সময় হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনায় আমি খুশি ছিলাম না। মোদি আজ আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। এটি একটি বড় পদক্ষেপ।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘ভারতের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করতে বাধ্য করব।’

ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসকে ই-মেইলে মোদি আসলেই এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তবে মার্কিন প্রশাসন বলছে, ভারতের এই অবস্থান পরিবর্তন বিশ্ব জ্বালানি বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

বিশ্ব জ্বালানি কূটনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত

ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা জোরদার হয়েছে। ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরেই মস্কোর তেল রাজস্ব বন্ধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে চাপ দিয়ে আসছে। এর মধ্যে ভারতের মতো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি আমদানিকারক দেশ রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিলে তা হবে কূটনৈতিকভাবে একটি বড় সাফল্য।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত রাশিয়া থেকে দীর্ঘদিন ধরে তুলনামূলক কম দামে তেল কিনে আসছিল। মার্কিন চাপ সত্ত্বেও দিল্লি এতদিন ক্রয় অব্যাহত রেখেছিল। তবে এবার মোদির এই আশ্বাস নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

তাৎক্ষণিকভাবে নয়, ধাপে ধাপে পরিবর্তন

রয়টার্স ট্রাম্পের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই পরিবর্তন তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে না, তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কার্যকর হতে পারে। মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে রাশিয়ার তেল বাজারে বড় ধাক্কা লাগবে।

ভারতের ওপর বাড়তি শুল্কের চাপ

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ শুল্ক হার। এর মধ্যে রুশ তেল আমদানির কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কও আরোপ করা হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে ভারতীয় পণ্যের খরচও বেড়েছে।

রাশিয়ার শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে ভারত

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি আমদানিকারক দেশ ভারত রাশিয়ার অন্যতম শীর্ষ গ্রাহক। রাশিয়ার তেল রাজস্বের একটি বড় অংশই আসে ভারতের মতো দেশ থেকে। দিল্লি যদি সত্যিই রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করে, তবে মস্কোর জ্বালানি আয়ে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে—এমনটাই মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

ওয়াশিংটনের এক সিনিয়র কূটনীতিক বলেছেন, ‘ভারতের এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নয়; এটি ভূ-রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।’

বিশ্ব বাজারে ভারতের এই অবস্থান পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদেশগুলোর জন্য এক কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে দিল্লির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি আসেনি।

👉 সূত্র: এনডিটিভি, রয়টার্স, হোয়াইট হাউস প্রেস ব্রিফিং।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *