“মেয়ের ধর্ষণ মামলায় বাবাকে আসামি, অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য”

আলমাস হোসাইন ঢাকা জেলা প্রতিনিধি :

স্ত্রী-সন্তানের ষড়যন্ত্র, সম্পত্তি দখল আর মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় ভেঙে গেছে এক বাবার শেষ আশার স্বপ্ন

৩৪ বছর কুয়েতের মরুভূমিতে ঘাম ঝরিয়েছেন আব্দুর রহিম (৬২)। জীবনের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন সন্তানদের ভবিষ্যৎ ও পরিবারের জন্য। কষ্টার্জিত অর্থে গড়েছেন স্বপ্নের তিনতলা বাড়ি—আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামে। প্রবাস থেকে ফিরে তিনি ভেবেছিলেন, এবার শান্তি, এবার আপনজনদের মাঝে হাসিমুখে জীবন কাটাবেন।

কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস—যে বাড়ি সুখের ঘর হওয়ার কথা ছিল, সেটাই এখন অভিশাপ। যে সন্তানদের জন্য জীবন কাটালেন, তারাই আজ বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

ষড়যন্ত্রের জালে এক বাবা

প্রথম স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও দুই মেয়ে সুমাইয়া ইসলাম ও সুমনা ইসলাম রিতুর সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ক্রমেই ভয়াবহ আকার নেয়। স্থানীয়রা জানান, ২০২৩ সালের অক্টোবরে মেয়ে সুমাইয়া ও জামাতা কাউছার, ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল হকের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা রহিমের বাড়িতে হামলা চালায়। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লিখিয়ে নেয় চারটি ফ্ল্যাট। সে সময় থানায় মামলা করতে গেলে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের কারণে মামালা নেয়নি পুলিশ।

পরবর্তীতে আদালতে গিয়ে মামলা করেন—সি.আর. মামলা নং-৩৫২/২৪। এর পর থেকেই তার জীবনে নেমে আসে একের পর এক দুঃস্বপ্ন।

বাবার বিরুদ্ধে মেয়ের ধর্ষণ মামলা

আশ্চর্যের বিষয়, নিজের বড় মেয়ে সুমাইয়া ইসলামই বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দায়ের করেন। গাজীপুরে করা এ মামলায় তদন্তে সত্যতা মেলেনি। পিবিআই আদালতে নেগেটিভ প্রতিবেদন দেয়। প্রশ্ন জাগে ঘটনাস্থল আশুলিয়া হলেও মামলা করা হয় গাজীপুরে।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর আবারও ছোট মেয়ে সুমনাকে ভিকটিম দেখিয়ে প্রথম স্ত্রী ফাতেমা বেগম নতুন করে ধর্ষণ মামলা করেন।

আইনজীবীরা বলছেন, মামলার এজাহারে ছিল ‘ধর্ষণ চেষ্টার’ অভিযোগ, অথচ আইনি ভিত্তি ছাড়াই সেটি রূপান্তরিত হয় পূর্ণ ‘ধর্ষণ মামলায়’। পুলিশের একজন এসআই ঘটনাস্থল যাচাই না করেই প্রতিবেদন দেন। আর এই প্রক্রিয়াতেই জেলহাজতে যেতে হয় আব্দুর রহিমকে।

সিসিটিভি ফুটেজে বাবার নির্দোষ প্রমাণ?

ঘটনার দিন পুরো বাড়িতে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, রহিম সারাক্ষণ নিচতলায় ছিলেন। দ্বিতীয় তলায় ওঠেননি। অথচ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় তলার এক কক্ষে ঘটনা ঘটেছে।

রহিমের দ্বিতীয় স্ত্রী রহিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“আমরা দুজন বিদেশে কাটিয়েছি জীবনের সোনালী সময়। সেই টাকায় এই বাড়ি করেছি। এখন সেই বাড়িটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার স্বামীকে ষড়যন্ত্র করে জেলে পাঠিয়েছে। আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এক মেয়ে বাবাকে ধর্ষণের আসামি বানাবে—এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কষ্ট কী হতে পারে?”

মায়ের অস্বচ্ছ বক্তব্য

বাদী ফাতেমা বেগম বলেন, “কোনো মা কি চায় তার মেয়েকে নিয়ে মামলা করতে? কিন্তু সত্যি ঘটনা ঘটেছে বলেই আমি বাদী হয়েছি।” তবে আগের মামলা কেন মিথ্যা প্রমাণিত হলো, সে বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট কোনো জবাব দিতে পারেননি।

আইনজীবীর মন্তব্য

একজন স্থানীয় আইনজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“একজন পিতা, যিনি প্রবাসে সারা জীবন কাটিয়েছেন সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য—তার বিরুদ্ধে বারবার ধর্ষণ মামলা দায়ের আর সম্পত্তি দখলের চেষ্টা, এটি সুস্পষ্টভাবে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়েও বড় প্রশ্ন আছে।”

মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেওয়া এক প্রশ্ন

একজন বাবা, যিনি সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে নিজের যৌবন বিসর্জন দিয়েছেন, আজ সেই বাবার কপালে জুটেছে কারাগারের ঘানি। আদালত ও আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আজ তিনি প্রমাণ করতে চাইছেন—আমি অপরাধী নই, আমি শুধু এক প্রতারিত বাবা।

প্রশ্ন জাগে—
সন্তান যখন বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখন বিচার কে দেবে?
রাজনৈতিক প্রভাব ও সম্পত্তির লোভ কি পারিবারিক সম্পর্ককে এমনই কলুষিত করে তুলবে?
একজন প্রবাসীর সারা জীবনের স্বপ্ন কি এভাবেই ভেঙে যাবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *