নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর মতিঝিল ট্রাফিক জোনে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মেজবাহ। দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকায় অবস্থান করে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় গড়ে তুলেছেন এক অঘোষিত দাপট। অভিযোগ উঠেছে—চালকদের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে অর্থ আদায়, ঘুষের বিনিময়ে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া এবং কর্তৃত্বের দাপটে সাধারণ মানুষের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছেন তিনি। গুলিস্তান ফ্লেভার মোড়ের ট্রাফিক বক্সে বসে মেজবাহ তার প্রভাব খাটাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
সম্প্রতি একদল সাংবাদিক ওই এলাকায় গিয়ে টিআই মেজবাহর বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “একই জায়গায় বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করছেন কেন? আপনি কি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত?” এ প্রশ্নে উত্তেজিত হয়ে টিআই মেজবাহ টেবিলে হাত মেরে বলেন, “আমার যদি কোনো ক্ষমতা না থাকত, তাহলে কি আমি এতদিন এখানে থাকতে পারতাম? আপনি কি দেখতে চান আমার কী ধরনের ক্ষমতা আছে?” সাংবাদিকদের হাতে থাকা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়—সাংবাদিক শান্তভাবে প্রশ্ন করলেও টিআই মেজবাহ কর্তৃত্বের ভঙ্গিতে উত্তর দিচ্ছেন এবং বারবার “ক্ষমতা” শব্দটি ব্যবহার করে নিজের প্রভাব জাহির করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, টিআই মেজবাহ ও তার সহযোগী সার্জেন্ট তন্বী নিয়মিতভাবে গাড়ি আটকিয়ে চালকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। কাগজপত্রে সামান্য ত্রুটি থাকলেই তা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে অর্থ দাবি করা হয়। একাধিক চালক জানান, যার কাছে টাকা আছে, তার গাড়ি ছাড়ানো সহজ; যার কাছে নেই, তার গাড়ি আটকেই থাকে। অনেক ক্ষেত্রে নাম বললেই ১০০ টাকার চুক্তি হয়। আবার বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টিআই মেজবাহ ও সার্জেন্ট তন্বী প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। গুঞ্জন রয়েছে, এসব টাকা নিয়মিতভাবে উচ্চপর্যায়ে ভাগ হয়ে যায়, যার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে টিআই মেজবাহর রূঢ় আচরণে সাংবাদিক সমাজে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক সাংবাদিক জানিয়েছেন, একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে এমন ভাষা ও আচরণ কাম্য নয়। তারা বলেন, “যদি প্রশাসন নীরব থাকে, তবে সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার কোথায়?”
স্থানীয়রা জানান, টিআই মেজবাহ ও সার্জেন্ট তন্বীর দাপটে মতিঝিল এলাকায় সাধারণ চালক ও পথচারীরা এখন আতঙ্কে থাকে। তারা দাবি করেন, ঘুষ বাণিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহারের এই চক্র বন্ধ করতে হলে দ্রুত তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দাপট দেখানো এই দুই ট্রাফিক কর্মকর্তার অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—আইনের রক্ষক যখন আইনের ভঙ্গকারী হয়ে ওঠেন, তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?