রাজশাহী টিটিসি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন 

রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি :

 

রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নারী সহকর্মীকে অনৈতিক প্রস্তাব ও হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইন ব্যবস্থাগ্রহণের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। শনিবার (২ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তারা সরকারের এই হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ সময় লিখিত বক্তব্য দেন টিটিসির সাবেক শিক্ষার্থী মো: আল আমিন। এতে অন্যদের মধ্যে শিক্ষার্থী ইব্রাহিম হোসেন, শিক্ষার্থী অমিতাভ পাল ও আব্দুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অধ্যক্ষ এসএম এমদাদুল হকের নানা অবৈধ, বিতর্কিত ও বিধি বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ও ঐতিহ্য আজ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। প্রতারণা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি এই অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে যাকেই প্রতিপক্ষ মনে করেন এবং যারা তার অন্যায় কাজে সমর্থন করেন না তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে নিগৃহীত ও হয়রানি করেন। বিভিন্ন সময়ে অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ সার্বিক বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও সেসব বিষয়ে “রহস্যজনক” কারণে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ক্ষমতাচ্যুত আ’লীগ সরকারের কিছু মন্ত্রী ও নেতার আস্থাভাজন হওয়ায় অধ্যক্ষ দলীয় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি ও অন্যায় অপকর্ম করে গেছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা অধ্যক্ষ এসএম এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১৪টি ট্রেডে নিয়মিত শর্ট কোর্সে ভর্তিইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য বিণামূল্যে ফরম বিতরণ করার কথা। অথচ অধ্যক্ষের নির্দেশে তাদের কাছ থেকে প্রতি ফরমের জন্য ৬০ টাকা করে আদায় করা হয়। যা অন্যায় ও অবৈধ। দেশের অন্যান্য টিটিসিতে এই ফরম বিনামূল্যে দেওয়া হলেও রাজশাহী টিটিসিতে প্রতি ফরমের জন্য ৬০ টাকা করে আদায় করা হয়।

অধ্যক্ষ এসএম এমদাদুল হক নিয়ম বহির্ভূতভাবে ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কিছু অদক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়েছেন। এতে করে প্রশিক্ষার্থীরা ভালো মানের ও যথাযথ প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না। কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্সে এক হাজার টাকা ফি প্রদানের মাধ্যমে কোর্স সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে আরেকটি কোর্সে বাধ্যতামূলকভাবে ভর্তি করে তাদের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূত অতিরিক্ত তিন হাজার পাঁচশত টাকা আদায় করা হয়। অপ্রয়োজনীয় কোর্স করতে বাধ্য করার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতি চরম জুলুম করছেন অধ্যক্ষ।

সরকারি ভবন, আইটি ল্যাব, আসবারপত্র এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বিএমইটি এর অনুমোদন ছাড়াই ডিজিটাল মার্কেটিং ফর ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করানো হয়। এর মাধ্যমে কোর্স ফি এর সম্পূর্ণ টাকা অধ্যক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট ট্রেইনারের পকেটে যায়। তারা পরষ্পর যোগসাজসের মাধ্যমে এই টাকা আত্নসাত করেন। ড্রাইভিং কোর্সের জন্য বরাদ্দকৃত নতুন ট্রেনিং কার প্রশিক্ষণার্থীদের অনুশীলন করার সুযোগ না দিয়ে অধ্যক্ষ নিজেই ব্যাক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন।

ওয়েল্ডিং ট্রেডের প্রশিক্ষণার্থীদের ব্যবহারিক কাজের শারীরিক সুরক্ষার সরঞ্জাম ক্রয় বাবদ বরাদ্দকৃত টাকা অধ্যক্ষ আত্নসাত করেন। এর ফলে প্রশিক্ষণার্থীরা সব সময় অঙ্গহানির ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। এতে কারিগরি শিক্ষাই দক্ষতা অর্জনের বিষয়টি চরমভাবে ব্যহত হয়। জেনারেল প্রশিক্ষক সাবিহা সুলতানা কর্তৃক পরিচালিত ফুড ট্রেডের সকল প্রশিক্ষণের ভর্তির টাকার হিসাব সাবিহা সুলতানা ও অধ্যক্ষ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং এই হিসাব অফিসের প্রশিক্ষণ শাখায় থাকে না।

ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডের সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর মোঃ ওবাইদুল্লাহ তার জাতীয় দক্ষতা মান উন্নয়ন পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পরেও আর্থিক সুবিধা দিয়ে অধ্যক্ষকে ম্যানেজ করে নিয়মবহির্ভূত ভাবে কৃতকার্য হন। ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডে অদক্ষ প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কারণে ওই ট্রেডের শিক্ষার মান অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে।

পিএলসি কোর্সে ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডে অদক্ষ প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কারণে বিগত দুইটি কোর্সে একজন শিক্ষার্থীও কৃতকার্য হতে পারেননি। প্রতারণার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি হলেন অধ্যক্ষ। যার মামলা নম্বরÑ জিআর ৭২/২১ ধারা- ৪০৬/৪২০/৪৬৮/৪৭১/১০৯ পেনাল কোড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *