প্রতিবেদক- ব্যুরো চিফ মোহাম্মদ হোসেন হ্যাপী
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সীমানা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে সম্প্রসারিত এলাকায় কুতুবপুর ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই তারা সিটি করপোরেশনের আওতায় আসার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এবার সিদ্ধান্তে তাদের বাদ দেওয়া হওয়ায় তারা নিজেকে বঞ্চিত ও উপেক্ষিত মনে করছেন।
সরকার সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সীমানা বর্ধিত করার প্রস্তাবনা প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে বৈষম্যের অবসান দাবী প্রস্তাবনা অনুযায়ী সদর, বন্দর এবং সোনারগাঁ উপজেলার অংশ সিটিতে যুক্ত করার বিষয়ে সেখানকার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মন্তব্য জানতে চেয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাব-নায় কুতুবপুর ইউনিয়নের আংশিক যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ এখানকার বাসিন্দারা। কারন দীর্ঘ ১০ বছরের বেশী সময় ধরে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। নিজেদের সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রস্তাবনায় কুতুবপুরের সামান্য কিছু অংশ যুক্ত করার প্রস্তাবনা জানার পর স্থানীয়দের মাঝে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। প্রস্তাবিত অংশে বলা হয়, কুতুবপুর ইউনিয়নের একাংশ সিটি করপোরেশনে যুক্ত করা হবে।
এই একাংশের মধ্যে রয়েছে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পূর্ব অংশ। যেখানে কুতুবপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত লামাপাড়া, ভূইগড়, মাহমুদপুর সহ বেশ কয়েকটি এলাকা রয়েছে। কিন্তু বড় অংশ থেকে গেছে বাইরে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ কুতুবপুরের বাসিন্দারা। তারা বলছেন, লিংক রোডের পশ্চিম প্রান্তে থাকা ফতুল্লা ইউনিয়ন যদি যুক্ত করা হয় তবে কোন যুক্তিতে কুতুবপুরকে বাদ দেয়া হচ্ছে? স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কুতুবপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে নাগরিক সুবিধার অভাব সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং নাগরিক সেবাও বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া এই ইউনিয়নে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের বসবাস। শিল্প নগরী হওয়ায় এখানে বিভিন্ন জেলার মানুষ বসবাস করে কর্মসূত্রে। একটি ইউনিয়ন পরিষদে যেই পরিমান উন্নয়ন বরাদ্ধ থাকে তা দিয়ে কিছুই হয় না। এখানে পানি সংকট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব, সড়ক বাতির অভাব, ভাঙ্গাচোড়া সড়ক, জলাবদ্ধতা, মশা সমস্যা নিত্যদিনের সঙ্গি। এমন অবস্থা থেকে উত্তরনে বার বার সিটি করপোরেশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে সিটিতে যুক্ত হবার জন্য চিঠি দিয়েছে কুতুবপুর ইউনিয়ন নাগরিক কমিটি। কিন্তু শামীম ওসমান সেগুলো বার বার থামিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সকলেই স্বপ্ন দেখেছিলো এবার সিটিতে যুক্ত হবে কুতুবপুর ইউনিয়ন। কিন্তু অজানা কারনে কুতুবপুরের আংশিক যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি করপোরেশন যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এখানকার বাসিন্দারা।
কুতুবপুর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এস এম কাদির বলেন, ‘আমরা কুতুবপুরবাসী অনেক দিন ধরে চাইছিলাম যেন আমাদের এলাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে আসে। এই ইউনিয়নে ২ লাখ ভোটার, ৫ লাখের বেশী মানুষের বসবাস। এখানে ১% কৃষি জমি নেই। পুরোটা শহর হয়ে আছে। অথচ বন্দরের এমন ইউনিয়ন আছে যেখানে ৩০/৪০ হাজার ভোটার, তাদের সিটিতে যুক্ত করা হচ্ছে। আমরা বার বার স্মারকলিপি দিয়েছি এই ইউনিয়নকে সিটিতে যুক্ত করতে। কিন্তু আমাদের ইউনিয়নের পুরোটা কেন যুক্ত করা হচ্ছে না সেটা আমরা বুঝতে পারছি না।
স্থানীয় বাসিন্দা ও গণসংহতি আন্দোলনের জেলার সংগঠক শুভ দেব বলেন, ‘এটা একটি হটকারী সিদ্ধান্ত। কুতুবপুর পুরোটাই শহরে পরিণত হয়েছে। কুতুবপুরকে অবশ্যই সিটি করপোরেশনে যুক্ত করতে হবে। এই অঞ্চল কোন অবস্থাতেই ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় থাকতে পারে না। আমরা জোড়ালো দাবী তুলবো কুতুবপুরকে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করতে। আমাদের উত্তরে ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশন, পূর্বে এবং দক্ষিনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। মাঝামাঝি এলাকায় একটি ইউনিয়ন এভাবে অবহেলিত পড়ে থাকতে পারে না।