স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
রংপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে (৪২) প্রেমের ফাঁদে ফেলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল জরেজ ও তার কথিত প্রেমিকা শামীমা আক্তারের। শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা পরিণত হয় নৃশংস হত্যাকাণ্ডে। আজ শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর কাওরানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফিন।
তিনি বলেন, মূল আসামি জরেজের সঙ্গে শামীমা আক্তারের প্রায় এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে জরেজ শামীমাকে একটি নতুন প্রলোভন দেখায়। সে জানায়, তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করা গেলে ১০ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব। ওই অর্থের মধ্যে ৭ লাখ নেবে জরেজ এবং বাকি ৩ লাখ নেবে শামীমা। পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা এক মাস আগে থেকেই নিহত আশরাফুলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ শুরু করে। ধীরে ধীরে তাকে আকৃষ্ট করে এবং নিয়মিত অডিও–ভিডিও কলে কথা বলতে থাকে।
র্যাব অধিনায়ক জানান, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১১ ডিসেম্বর জরেজ ও আশরাফুল ঢাকায় এসে শামীমার সঙ্গে দেখা করেন। পরে শনির আখড়ায় ৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তিনজন মিলে একটি বাসা নেন। সেখানে সুযোগ বুঝে চেতনানাশক ব্যবহার করে আশরাফুলকে অচেতন করা হয় এবং অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন জরেজ। এরপর ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায়ের চেষ্টা শুরু হয়।
হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে ফায়েজুল আরেফিন বলেন, শামীমার দেওয়া তথ্যে জানা গেছে—১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ তার হাত দড়ি দিয়ে বাঁধে এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়। এরপর অতিরিক্ত ইয়াবা সেবনের কারণে উত্তেজিত হয়ে জরেজ হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। অতিরিক্ত আঘাত এবং মুখ স্কচটেপে শ্বাস বন্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আশরাফুল। ঘটনার পরও একই ঘরে মরদেহ রেখে রাত কাটায় জরেজ ও শামীমা।
পরদিন ১৩ নভেম্বর মরদেহ গুমের উদ্দেশ্যে জরেজ বাজার থেকে একটি চাপাতি ও দুটি নীল রঙের ড্রাম কিনে আনে। বাসায় ফিরে চাপাতি দিয়ে মরদেহকে মোট ২৬ টুকরো করে দুই ড্রামে ভরে রাখে। পরে হাইকোর্ট মাজার গেট সংলগ্ন এলাকায় আসলে রাস্তায় পুলিশের তৎপরতা দেখে ভয়ে দুটি ড্রাম রাস্তার পাশে একটি বড় গাছের নিচে ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর অটোরিকশায় করে সায়েদাবাদে পৌঁছে তারা গা-ঢাকা দেয়।
র্যাব-৩ এর দাবি, হত্যাকাণ্ডের পর তারা দ্রুত তদন্তে নামে এবং প্রযুক্তির সহায়তায় কুমিল্লা থেকে শামীমাকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে মূলহোতা জরেজকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।