বিশ্বখ্যাত গবেষকদের চোখে গাজা পরিস্থিতি ‘গণহত্যা বলেই বিবেচিত হচ্ছে’

স্বাধীন আন্তর্জাতিক ডেস্ক: 

গাজায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশ্বের নামকরা গণহত্যা-গবেষকরা। ডাচ পত্রিকা এনআরসি পরিচালিত এক গভীর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, গাজায় যা ঘটছে, তা আর কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়—এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যার রূপরেখা বহন করছে।

এই অনুসন্ধানে ইসরাইলসহ ছয়টি দেশের সাতজন খ্যাতনামা গবেষকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যারা প্রত্যেকেই গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অনেকে বলেছেন, তাঁদের সহকর্মীরাও এই মূল্যায়নে একমত।

ইসরাইলি গবেষক রাজ সেগাল মন্তব্য করেছেন, “আমি এমন কাউকে জানি না যার কাজকে আমি সম্মান করি এবং যিনি এটিকে গণহত্যা মনে করেন না। সমস্ত প্রমাণ একত্র করলে এর বিপক্ষে যুক্তি দেওয়া অসম্ভব।”

আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উগুর উমিত উঙ্গর আরও স্পষ্ট করে বলেন, “আজও যদি কেউ বলেন, এটা গণহত্যা নয়, আমি তাঁদের চিনি না। বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।”

এনআরসি গবেষণাটি ‘জার্নাল অফ জেনোসাইড রিসার্চ’-এ প্রকাশিত ২৫টি সাম্প্রতিক গবেষণা নিবন্ধ পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রণীত। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই খাতের আটজন গবেষকই গাজায় গণহত্যা বা অন্তত ‘গণহত্যা সহিংসতা’ সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “এটি একটি বিরল ক্ষেত্র যেখানে ‘গণহত্যা’ কী, সে বিষয়ে গবেষকদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বিস্ময়কর ঐকমত্য রয়েছে। বেশিরভাগ গবেষকই মনে করেন, ইসরাইলের বর্তমান সরকার এই প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপে প্রবেশ করেছে।”

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণও গবেষকদের মূল্যায়নকে সমর্থন করছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে গাজায় সংঘটিত ঘটনাকে প্রথমবারের মতো ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যা দেয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যদিও সরাসরি ‘গণহত্যা’ শব্দ ব্যবহার করেনি, তবে বলেছে যে সেখানে ‘গণহত্যামূলক কার্যক্রম’ ঘটেছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ তাঁর প্রতিবেদনগুলোতে গাজায় স্পষ্টভাবে গণহত্যা চলার কথা উল্লেখ করেছেন।

তবে গবেষকরা এটিকে একটি ‘তাৎক্ষণিক’ গণহত্যা নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি ও পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ হিসেবে দেখছেন। “গণহত্যা ঘটেছে কিনা” সেই প্রশ্নে নয়, বরং “এটি কীভাবে সংঘটিত হচ্ছে” সেই বিশ্লেষণেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

এই অভিমতগুলো আরও একবার ইঙ্গিত করে যে, গাজায় ইসরাইলি অভিযানের পেছনে শুধু রাজনৈতিক বা কৌশলগত লক্ষ্য নেই, বরং একটি নৃশংস আদর্শিক উদ্দেশ্যও রয়েছে—যা ধীরে ধীরে একটি জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *