স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন—এই সম্ভাবনা সামনে রেখে মাঠে সক্রিয় হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নির্বাচন সামনে রেখে শুধু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়, সাংগঠনিক ঘর গোছানোর দিকেও জোর দিয়েছে দলটি।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন, পৌরসভা, থানা, উপজেলা, মহানগর ও জেলা পর্যায়ে যেসব কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে, সেখানে নতুন কমিটি গঠনের জন্য মৌখিক ও লিখিত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এ নির্দেশনা অনুযায়ী, ঢাকা ছাড়া ৯টি সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতারা মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব কমিটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
তবে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কয়েকটি উপজেলায় কমিটি নিয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। কিছু ক্ষেত্রে বিতর্কিত কমিটি বাতিল করার নজিরও রয়েছে। দলের হাইকমান্ড ত্যাগী, নির্যাতিত, ক্লিন ইমেজধারী ও অনুগত নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। কাউন্সিল না করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কমিটি গঠনের অভিযোগও রয়েছে।
বিএনপির একটি উত্তরাঞ্চলীয় সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা জানান, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কমিটি গঠনের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “বিএনপি একটি বড় দল, এখানে অনেক নেতা নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে চান। সবাইকে আহ্বায়ক-সদস্য সচিব বানানো সম্ভব নয়। কাউকে বাদ পড়তেই হবে, আর তখনই অনুগতদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে।”
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, “কমিটি গঠনে বিভাগীয় পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক নেতারা কাজ করছেন। তারা তৃণমূলে বৈঠক করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন করছেন। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।”
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠিন সময় পার করেছে বিএনপি। সেই কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও দল পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গত বছর ৯ বিভাগে সম্মেলনের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে আছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিলেটে স্থায়ী কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন, খুলনায় আমানউল্লাহ আমান, বরিশালে আব্দুল আউয়াল মিন্টু, রংপুরে শামসুজ্জামান দুদু, কুমিল্লায় বরকতউল্লা বুলু, ফরিদপুরে ড. আসাদুজ্জামান রিপন এবং চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান।
ড. আসাদুজ্জামান রিপন জানান, “৫ আগস্টের আগে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। প্রার্থীদের অংশগ্রহণ, মতামত ও ভোটের মাধ্যমেই কমিটি হচ্ছে।”
চট্টগ্রাম বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানান, “চট্টগ্রাম দক্ষিণ, বান্দরবান ও নোয়াখালীর নতুন কমিটি হয়েছে। তাদের অধীনস্থ ইউনিটগুলোর পুনর্গঠন চলছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যাবে।”
সূত্র মতে, বিএনপির ৮২ সাংগঠনিক জেলার বেশিরভাগই আহ্বায়ক কমিটি হিসেবে চলছে। তৃণমূলেও একই চিত্র। অনেক ইউনিয়নে কোনো কমিটিই নেই। সম্প্রতি মেহেরপুর, কুড়িগ্রাম, মাগুরা, নাটোর, বান্দরবান, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, খুলনা, কুমিল্লা দক্ষিণ ও মহানগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায় নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদীতে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠিত হয়েছে।
তবে এসব কমিটি নিয়ে নানা বিতর্কও তৈরি হয়েছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় বিতর্কিত নেতাদের কমিটিতে রাখায় ৯ দিনের মাথায় কমিটি বাতিল করা হয়। মাদারীপুরের রাজৈরের ইশিবপুর ইউনিয়নে সম্মেলনে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে স্থানীয় নেতারা তারেক রহমানকে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
এখন দেখার বিষয়, বিএনপি এই সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা ও দ্বন্দ্ব কাটিয়ে দলীয় ভিত্তি কতটা মজবুত করতে পারে, এবং নির্বাচনমুখী রণকৌশলে এসব প্রক্রিয়া কেমন কার্যকর হয়।