স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। তবে এই পরিকল্পনাগুলোর সফল বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সোমবার (৩০ জুন) সচিবালয়ে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চীনের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “বায়ুদূষণ একটি বহুমাত্রিক সমস্যা। এটিকে একটি দপ্তর বা মন্ত্রণালয় একা মোকাবিলা করতে পারবে না। এজন্য নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সড়ক পরিবহন বিভাগ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সমন্বিতভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।”
তিনি জানান, সরকারের লক্ষ্য শুধু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়, বরং বায়ুদূষণের মূল কারণগুলো শনাক্ত করে টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা। এজন্য যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণকাজের ধুলাবালি ও ইটভাটা থেকে নির্গত দূষণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, “বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান উৎস হলো পুরনো, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন। সেগুলোর কারণে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে দূষণের মাত্রা ভয়াবহভাবে বাড়ছে। এ জন্য সড়ক থেকে এসব যানবাহন ধাপে ধাপে সরিয়ে নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। নতুন ২৫০টি পরিবেশবান্ধব বাস কেনার অনুমোদন পেয়েছি, যা অচিরেই গণপরিবহন খাতে যুক্ত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে ‘নো ব্রিক ফিল্ড জোন’ ঘোষণা করার চিন্তা চলছে। ইটভাটার ধোঁয়া দূষণের বড় উৎস। এ খাতকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে বায়ুর মান উন্নয়ন অসম্ভব।”
রিজওয়ানা হাসান জানান, শীতকালে বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে ধূলা ও ধোঁয়ার কারণে। এ পরিস্থিতির পরিবর্তনে নগরের ভাঙাচোরা রাস্তা সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। “শীতের আগেই—অক্টোবরের মধ্যে—প্রধান সড়ক ও গলিপথ সংস্কার করার পরিকল্পনা আছে, যাতে ধুলার মাত্রা কমে এবং নগরবাসী কিছুটা স্বস্তি পায়।”
চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দেন তিনি। বলেন, “চীন কয়েক দশক ধরে শিল্প উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এখন তারা সফলভাবে শহরগুলোতে বায়ুর মান উন্নয়ন করেছে। চীনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বিনিময়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
রিজওয়ানা হাসান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা যদি আন্তরিকভাবে কাজ করি এবং প্রতিটি সংস্থা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে, তবে আগামী এক-দুই বছরের মধ্যেই বায়ুদূষণ পরিস্থিতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। সরকারের অঙ্গীকার স্পষ্ট—নগরবাসীর জন্য স্বাস্থ্যকর, দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা।”