স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা আরও সুশৃঙ্খল ও সমন্বিতভাবে করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দেশের সব মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক, জেলার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনার মূল লক্ষ্য হলো ডেঙ্গু রোগীদের সেবা মান উন্নয়ন, ঝুঁকি হ্রাস এবং হাসপাতালের চিকিৎসা প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের সব হাসপাতালকে অবিলম্বে বিশেষ ওয়ার্ড তৈরি করতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসা টিম গঠন করতে হবে। এতে প্রতিটি রোগীর চিকিৎসা নির্ধারিত মান অনুসারে হবে এবং হাসপাতালে সেবা প্রদান আরও সুশৃঙ্খল হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে এনএস-১ পরীক্ষা, জরুরি চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত ঔষধের ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীদের একটি নির্দিষ্ট ওয়ার্ড বা কক্ষে রাখা জরুরি এবং আইসিইউ প্রয়োজন হলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ছাড়া চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য বিশেষ দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য মেডিসিন, শিশু ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করতে হবে। এই বোর্ডের তত্ত্বাবধানে মেডিকেল অফিসার, রেসিডেন্ট ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের একটি দল শুধু এই রোগীদের চিকিৎসা দেবেন। হাসপাতালের বহির্বিভাগে আগত সন্দেহভাজন রোগীদেরও একটি নির্দিষ্ট কক্ষে একই বোর্ড ও চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালের চারপাশে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানও নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। হাসপাতাল পরিচালককে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভাকে পত্র প্রেরণের মাধ্যমে এ কার্যক্রম তদারকি করতে হবে। পাশাপাশি প্রতি শনিবার সকাল ১০টায় হাসপাতালে পরিচালক, তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জনের সভাপতিত্বে ডেঙ্গু সমন্বয় সভা করার কথাও বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের নির্দেশনা শুধুমাত্র হাসপাতালের চিকিৎসার মান বাড়াবে না, বরং রোগী ও পরিবারের জন্য ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করবে। চিকিৎসা প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খল ও সমন্বিত হলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর হারও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে।
ডেঙ্গু বাংলাদেশের জন্য প্রতি বর্ষা মৌসুমে একটি বড় স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের বর্ষায় ইতোমধ্যে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ এখনও তুলনামূলক কম, তবে সঠিক চিকিৎসা, সতর্কতা ও সমন্বিত ব্যবস্থা ছাড়া পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ডা. মঈনুল আহসান বলেন, “ডেঙ্গু রোগীদের জন্য সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা গঠন ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। প্রতিটি হাসপাতালকে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে, যাতে রোগীরা দ্রুত ও মানসম্মত সেবা পান এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পদক্ষেপ দেশব্যাপী ডেঙ্গু মোকাবেলায় একটি সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে নেওয়া হলো, যা দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।