প্রিমিয়ার লিগে ব্রেন্টফোর্ডের কাছে ৩-২ হারে লিভারপুলের দুরবস্থা অব্যাহত

স্বাধীন স্পোর্টস ডেস্ক: 

প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের দুরবস্থা যেন কাটছেই না। শনিবার ওয়েস্ট লন্ডনের ব্রেন্টফোর্ড কমিউনিটি স্টেডিয়ামে ব্রেন্টফোর্ডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ৩-২ গোলে পরাজয় স্বীকার করেছে জার্গেন ক্লপের দল। এই ফলাফলের ফলে লিভারপুল তাদের প্রিমিয়ার লিগে টানা চতুর্থ হার লেখেছে, যা ক্লাবের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ম্যাচের শুরু থেকেই স্বাগতিকদের আক্রমণ লক্ষ্যণীয় ছিল। মাত্র ৫ মিনিটে দাঙ্গো ওয়াটারা একটি দারুণ গোল করে ব্রেন্টফোর্ডকে এগিয়ে দেন। লিভারপুলের রক্ষণ ভুলে ভরা ও আক্রমণ ম্লান থাকায় প্রথমার্ধের মধ্যভাগে দেখা যায় স্বাগতিকদের প্রভাব। বিরতির ঠিক আগে কেভিন শাডে ব্যবধান দ্বিগুণ করে লিভারপুলের জন্য চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন করে তোলে।

প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে মিলোস কেরকেজ একটি শক্তিশালী আক্রমণের মাধ্যমে লিভারপুলকে ফিরিয়ে আনেন। এই গোল যেন দলের জন্য একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস। সমর্থকরা মনে করেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুল সমতা ফিরিয়ে এনে ম্যাচে দাপট দেখাবে, কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হয়নি।

দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে ভিএআরের সিদ্ধান্তে ব্রেন্টফোর্ড একটি পেনাল্টি পায়। ইগর থিয়াগো স্পটকিকের মাধ্যমে সফলভাবে গোল করলে ব্যবধান আবারও বাড়ে, যা লিভারপুলের জন্য আরও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ৮৯ মিনিটে মোহাম্মদ সালাহ একটি গোল করে দলকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও তা যথেষ্ট ছিল না। ফলস্বরূপ লিভারপুল হেরে যায় ৩-২ গোলে।

চ্যাম্পিয়নস লিগে সম্প্রতি আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টকে ৫-১ গোলে হারানো লিভারপুলের আত্মবিশ্বাস কিছুটা বাড়েছিল। তবে প্রিমিয়ার লিগে ফিরে একই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তারা—ভুলে ভরা রক্ষণ, রক্ষণী ত্রুটি এবং আক্রমণে ধারাবাহিকতার অভাব। বিশেষ করে ফ্ল্যাঙ্ক থেকে আক্রমণ তৈরি করতে না পারা এবং দ্রুত রক্ষণে ফিরে যাওয়ার ব্যর্থতা লক্ষ্য করা গেছে।

এই ফলাফলের মাধ্যমে লিভারপুল ৯ ম্যাচে ৫ জয় ও ৪ হারে ছয় নম্বরে অবস্থান করছে। সমান ম্যাচে ব্রেন্টফোর্ডের রেকর্ড ৪ জয়, ৪ হার ও একটি ড্র, যা তাদের লিগে অবস্থান শক্ত করেছে।

জার্গেন ক্লপ ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের জানান, “আমরা চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের রক্ষণে ত্রুটি এবং গোল করার সুযোগ কাজে লাগানো না পারা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা জানি আমাদের ফ্যানরা আমাদের থেকে আরও ভালো পারফরম্যান্স আশা করছে। আমরা দলে মনোবল বাড়াতে চেষ্টা করছি।”

লিভারপুলের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

রক্ষণভিত্তিক ত্রুটি – কেভিন শাডে এবং দাঙ্গো ওয়াটারার গোলগুলো প্রমাণ করে রক্ষণ ব্যর্থতা। আক্রমণে ধারাবাহিকতা অভাব – যদিও মিলোস কেরকেজ এবং মোহাম্মদ সালাহ কিছু শট নেয়, তবুও তা বড় ইনিংসে রূপ নিতে পারেনি। গোল করার সুযোগ কাজে লাগানো না – ম্যাচে বেশ কয়েকটি সুপরিকল্পিত আক্রমণ শেষ পর্যন্ত গোলে রূপ পায়নি।

সমর্থকরা চিন্তিত যে লিভারপুল যদি এই রকম ধারাবাহিক ফলাফল দেখায়, তাহলে তারা শীর্ষে থাকা দলগুলোর সাথে লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে টটেনহ্যাম, আর্সেনাল এবং চেলসি’র মতো দলগুলো ধারাবাহিকভাবে জয় নিশ্চিত করছে।

ক্লাবের বিশ্লেষকরা মনে করেন, লিভারপুলকে দ্রুত রক্ষণ এবং আক্রমণে সমন্বয় বাড়াতে হবে, খেলোয়াড়দের মানসিকতা শক্ত করতে হবে এবং ফিনিশিং দক্ষতা উন্নত করতে হবে। কিছু পরিবর্তন করলে তারা আবারও শীর্ষ চারের মধ্যে ফিরে আসতে পারবে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, প্রিমিয়ার লিগে এই ধরণের ধারাবাহিক হারের সময়ে মোটিভেশন এবং দলীয় সমন্বয় বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। ক্লপের পরিকল্পনা হচ্ছে দলের মনোবল ধরে রাখা এবং চ্যাম্পিয়নস লিগের মত বড় ম্যাচে দলের আত্মবিশ্বাস তৈরি করা।

লিভারপুলের সমর্থকরা আশা করছেন, ক্লপের দল আগামী ম্যাচে ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনবে এবং ব্রেন্টফোর্ডের মতো খেলার মাধ্যমে লিগে নিজের শক্তি প্রদর্শন করবে। তাদের লক্ষ্য বাকি মৌসুমে শীর্ষ চারে অবস্থান ধরে রাখা এবং প্রতিযোগিতায় শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *