ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের বিশেষ সাধারণ সভা, ঐক্য, অধিকার আর শ্রমিক নিরাপত্তায় নতুন অঙ্গীকার

মোঃ আনজার শাহ:

ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বহনকারী সংগঠনের নিজস্ব প্রাঙ্গণে। স্লোগান ছিল সবার মুখে—সুনিয়ায় মজদুর এক হও, চিরজীবী হউক। শ্রমিক নেতা, প্রতিনিধি এবং পরিবহন খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল আন্তরিকতা, উদ্বেগ, প্রত্যাশা আর পরিবর্তন-চেতনার টানাপোড়েন।

১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন বহু সংগ্রাম, অর্জন আর ঐক্যের মধ্য দিয়ে দেশের শ্রমিক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হয়ে আছে। সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই বিশেষ সাধারণ সভায় উঠে আসে শ্রমিকদের নিত্যদিনের চ্যালেঞ্জ, চলমান সংকট, সংগঠনের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা এবং নতুন করে ঐক্য সুদৃঢ় করার আহ্বান।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জনাব আঃ রহিম বক্স দুদু। তিনি শ্রমিকদের সার্বিক সুরক্ষা, বেতন কাঠামো, কর্মঘণ্টা ও দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁর ভাষায়, শ্রমিকই দেশের পরিবহন ব্যবস্থার প্রাণ। তাদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত না হলে সড়কে শৃঙ্খলা বা নিরাপত্তা কোনওটাই পূর্ণতা পাবে না।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ হুমায়ুন কবির খান। তিনি সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষ, পরিবহন আইন বাস্তবায়নের ধারা, যানবাহন মালিক–শ্রমিক সম্পর্ক এবং সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের জরুরি প্রয়োজন তুলে ধরেন। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং বৈধ লাইসেন্স নিশ্চিত করার বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেন।

বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জনাব মোঃ আনোয়ার হোসাইন। তিনি শ্রমিক রাজনীতিতে শুদ্ধতা, শৃঙ্খলা এবং সংগঠনের প্রতি নিষ্ঠার ওপর আলোকপাত করেন। একই সঙ্গে শ্রমিকবান্ধব রাষ্ট্র ও সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির আহ্বান জানান।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জনাব মোঃ নুরুল ইসলাম খান নাসিম, জনাব তানভীর আহম্মাদ রবিন, পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে মালিক–শ্রমিক ঐক্যের প্রশ্ন, সড়ক নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিভ্রান্তি, শ্রমিক সংকট, চিকিৎসা সহায়তা, এবং পরিবারভিত্তিক কল্যাণ তহবিল গঠনের প্রস্তাব।

অতিথিরা একসুরে বলেন, পরিবহন খাত দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। আর সেই চাকা সচল রাখেন এই দেশের শ্রমিকরা। তাই তাদের ন্যায্য অধিকার, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং সম্মান নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

পুরো সভা জুড়ে ছিল দায়িত্বশীলতার বার্তা এবং আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা। শ্রমিক ঐক্যের স্লোগান যেমন মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি নতুন প্রত্যাশা তৈরি করেছে—একটি নিরাপদ, শৃঙ্খলিত এবং শ্রমিকবান্ধব সড়ক পরিবহন খাত গড়ার প্রতিশ্রুতি।

অনুষ্ঠানটি শেষ হয় অধিকার, ঐক্য এবং মর্যাদার শপথ নিয়ে। এই সভা শ্রমিক আন্দোলনের ধারায় নতুন গতি যোগ করবে—এমনটাই প্রত্যাশা উপস্থিত সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *